বাংলাদেশ থেকে বৈশ্বিক অঙ্গনে: এএনএস মিউজিক ও এএনএস ডিজিটালের প্রভাব

ডিজিটাল দুনিয়া দ্রুত বদলাচ্ছে। শিল্পীরা আজকাল তাদের সৃষ্টিশীল কাজের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চাইছেন। এই পরিবর্তনের অগ্রভাগে রয়েছেন আকাশ সরকার, এএনএস মিউজিক ও এএনএস ডিজিটালের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মিউজিক-টেক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার তার গল্প কেবল উদ্যোক্তা সফলতার নয়, বরং স্বাধীন শিল্পীদের ক্ষমতায়নের প্রতি এক গভীর অঙ্গীকার এবং সঙ্গীত বিতরণের ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে গড়ে তোলার এক যাত্রা।

ভিশনের জন্ম

সবকিছুর শুরু একটি সহজ অথচ শক্তিশালী বিশ্বাস থেকে: শিল্পীরা শুধুই একটি ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যাটফর্মের বেশি কিছু পাওয়ার যোগ্য। আকাশ সরকার উপলব্ধি করেছিলেন যে বিদ্যমান সিস্টেমগুলো স্বাধীন শিল্পীদের কথা ভেবে তৈরি হয়নি। সেগুলো ছিল খণ্ডিত, অস্বচ্ছ এবং সচরাচর শিল্পীদের পূর্ণ মালিকানা বা স্বচ্ছতা দিত না। এই উপলব্ধি থেকেই জন্ম নেয় এএনএস মিউজিক এবং এএনএস ডিজিটাল—যেখানে ভিশন ছিল শিল্পী ও লেবেলদের হাতে এমন সব টুলস, স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা দেওয়া, যা তাদের সাফল্যের জন্য প্রয়োজন।

২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এএনএস মিউজিক দ্রুতই মিউজিক ডিস্ট্রিবিউশন ইন্ডাস্ট্রির গেম-চেঞ্জার হয়ে ওঠে। গ্লোবাল ডিজিটাল মিউজিক/ভিডিও ডিস্ট্রিবিউশন, রাইটস ম্যানেজমেন্ট, রয়্যালটি অ্যাকাউন্টিং, ভিভো (VEVO) সার্ভিসেস এবং মাল্টি-প্ল্যাটফর্ম মনেটাইজেশনে বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠান সবসময়ই শিল্পী-প্রথম নীতিতে আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলেছে। তাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ANS Backstage শিল্পী, লেবেল ও অধিকারধারীদের এক জায়গায় কনটেন্ট, রয়্যালটি ও অ্যানালিটিক্স ম্যানেজ করার সুযোগ দেয়।

একই সময়ে, একটি শক্তিশালী প্রযুক্তিগত ব্যাকবোন গড়তে ২০১৭ সালে আকাশ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এএনএস ডিজিটাল। এটি গ্রুপটির টেক আর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে তৈরি হয় এপিআই ইন্টিগ্রেশন থেকে শুরু করে ব্যাকএন্ড ইন্সট্রাকচার—যা এএনএস ইকোসিস্টেমকে চালিত করে। ফলে সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে।

উদ্যোক্তার পথচলা

বাংলাদেশে বেড়ে ওঠার সময় আকাশ সরকারও অন্যান্য উদ্যোক্তার মতো মূলধন, রিসোর্স ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু প্রযুক্তি আর সঙ্গীতের প্রতি তার ভালোবাসাই তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং এমন একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেন, যারা তার ভিশনকে সমর্থন করেছে।

সঙ্গীত ডিস্ট্রিবিউশন ইন্ডাস্ট্রি তখন ছিল দালাল বা মধ্যস্থতাকারীতে ভরপুর, যেখানে স্বাধীন শিল্পীরা নিজেদের কাজ ও উপার্জনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতেন। আকাশ সরকার বুঝেছিলেন যে প্রযুক্তিই পারে এই বাঁধাকে ভাঙতে—যেখানে শিল্পীরা নিজের ক্যারিয়ারের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন।

"আমরা এএনএস গড়েছি শুধুমাত্র মিউজিক বিতরণের জন্য নয়, বরং শিল্পীদের তাদের প্রাপ্য টুলস, ইনসাইটস এবং মালিকানা দেওয়ার জন্য," বলেন আকাশ সরকার।

বৈশ্বিক সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ

কিছু বছরের মধ্যেই এএনএস মিউজিক ও এএনএস ডিজিটাল বাংলাদেশ অতিক্রম করে উত্তর আমেরিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে শক্তিশালী উপস্থিতি গড়ে তোলে। বর্তমানে তারা ২০০+ শিল্পী ও ২৫০+ লেবেলকে সেবা দিচ্ছে বিশ্বজুড়ে।

এএনএস ব্যাকস্টেজের মাধ্যমে শিল্পীরা এখন এমন টুলস পাচ্ছেন, যা একসময় শুধু বড় রেকর্ড লেবেলদের নাগালেই সীমাবদ্ধ ছিল। বিস্তারিত রয়্যালটি রিপোর্ট থেকে শুরু করে রিয়েল-টাইম অ্যানালিটিক্স—সবই এখন শিল্পীদের হাতের মুঠোয়। ভিভো ইন্টিগ্রেশন এবং মাল্টি-প্ল্যাটফর্ম মনেটাইজেশন শিল্পীদের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এএনএস মিউজিকের প্রভাবশালী দিক হলো তাদের স্বচ্ছতা ও স্কেলযোগ্যতা। প্রতিযোগীদের মতো বাইরের টেক ভাড়া না নিয়ে এএনএস নিজস্ব টিম দিয়ে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। ফলে কাস্টমাইজেশন ও নিয়ন্ত্রণের মাত্রা একেবারেই আলাদা।

"আমাদের লক্ষ্য শুধু ডিস্ট্রিবিউটর হওয়া নয়, বরং শিল্পীদের প্রকৃত পার্টনার হওয়া," বলেন আকাশ সরকার।

ভবিষ্যতের ভিশন

আগামী দিনে এএনএস মিউজিক ও এএনএস ডিজিটাল শুধু ডিস্ট্রিবিউশন নয়, বরং প্রযুক্তি-ভিত্তিক সঙ্গীত শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। নতুন টুলস, উন্নত অ্যানালিটিক্স এবং আরও বেশি প্ল্যাটফর্ম ইন্টিগ্রেশন যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে শুরু করে আজকের এই বৈশ্বিক সাফল্য—সবই প্রমাণ করে আকাশ সরকারের ভিশন, উদ্ভাবন ও দৃঢ় অঙ্গীকারকে। তিনি বলেন, “আমরা কেবল একটি ব্যবসা গড়ছি না, বরং একটি আন্দোলন গড়ে তুলছি।”

আন্দোলনে যোগ দিন

আজকের দিনে স্বাধীন শিল্পীদের জন্য এএনএস মিউজিক ও এএনএস ডিজিটাল একটি অনুপ্রেরণা। যারা আরও বেশি স্বচ্ছতা, নিয়ন্ত্রণ ও সাফল্য চান, তাদের জন্য এএনএস তৈরি করেছে এক নতুন ইকোসিস্টেম।